সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মো. মামুন হোসেন, ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর)।।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় পবিত্র আরবী হরফের ক্যালিগ্রাফিতে গড়ে তোলা তিনটি স্তম্ভ, তিন চত্বর। সুউচ্চ মিনারের চারপাশ জুড়ে আরবী ক্যালিগ্রাফির এ স্তম্ভ শোভা বর্ধন করেছে যা জনমানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। ভান্ডারিয়ার ঢাকা-বরিশাল বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ত্রিমোহনায় কালিমা চত্বর, চরখালী ফেরিঘাটের কাছে মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর মহাসড়কের চৌরাস্তায় বিসমিল্লাহ চত্বর ও ভান্ডারিয়া ধাওয়া সড়কের ত্রিমোহনায় ফুলতলা বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে সুবহান-আল্লাহ চত্বর। চত্বরগুলোতে গড়ে তোলা মিনার আকৃতির স্তম্ভজুড়ে আরবী ক্যালিগ্রাফির শোভন কারুকাজ খচিত। উপকূলে আরবী ক্যালিগ্রাফির ইসলামী বাণী সম্বলিত এমন শোভন স্তম্ভ আর দেখা মেলে না। ফলে এ তিন স্তম্ভ ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে।
কালিমা চত্বর: ভান্ডারিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ত্রি-মোহনায় ৩১৫ ফুট এলাকা জুড়ে ১৫ ফুট মাটির উঁচু ডিবির ওপর ১৭ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার স্তম্ভটি গড়ে তোলা হয় ১৯৯৮ সালে। চারপাশে রেলিং আর বাহারী ফুল গাছে ঘেরা এ স্তম্ভটির নামকরণ করা হয় কালিমা চত্বর। ১৭ ফুট ৬ ইঞ্চির এ স্তম্ভটির ব্যাক গ্র্যাউন্ডে স্তম্ভ সমান লা ইলাহা ইল্লালাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখা আরবী হরফের ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করা হয়। কেবলামুখি এ হরফগুলি আকাশী রঙের টাইলসে ডিজাইন করা হয়েছে। বহুদূর থেকে পথচারী সকল মানুষের নজরে পড়ে এ ইসলামী বাণী। প্রায় ২১ বছর আগে গড়ে তোলা এ স্তম্ভটি দেশের ইসলামী বাণী সমৃদ্ধ প্রথম ক্যালিগ্রাফি স্থাপনা। ১৯৯৮ সালের ২৪ মে তৎকালিন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কালিমা চত্বরটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যোগাযোগমন্ত্রী সম্পূর্ণ তাঁর ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ইসলামী বাণী সমৃদ্ধ স্তম্ভ দৃশ্যত স্থানে নির্মাণ করে মহানুভবতার পরিচয় দেন। ৭ লাখ টাকারও অধিক ব্যায়ে নির্মিত এ কালিমা চত্বরটি পরে কয়েকদফা সংস্কার ও পরিবর্ধন করে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়।
বিসমিল্লাহ চত্বর: ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর সড়কের চরখালী ফেরিঘাটের কাছে চৌরাস্তার মোহনায় ২০০০ সালে গড়ে তোলা হয় ইসলামী বাণী সমৃদ্ধ আরও একটি সুউচ্চ স্তম্ভ। গোলাকৃতির রেলিং ঘেরা প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার মিনার আকৃতির স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে। তিনটি স্তম্ভের ওপর দন্ডায়মান স্তম্ভটির উপরের অংশটি অনেকটাই মসজিদের গম্ভুজ আকৃতির। তিনটি পিলারের নিচের অংশে আলাদা প্রস্তর মিনারটিকে বেশ নয়ণাভিরাম করেছে। নিচের তিনটি প্রস্তরে দুই পীঠে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা আরবী ক্যালিগ্রাফি স্তম্ভটির ভিন্ন মাত্রা দৃশ্যমান। লাল আর সবুজ রঙের টাইলসের বিশালাকৃতির এ ক্যালিগ্রাফি বহু দূর থেকে দৃশ্যমান হয়। এ স্তম্ভটির বিশেষত এই যে মূল ডিজাইনের সাথে একটি ফোয়ারা সংযোজিত রয়েছে। সেই সাথে নানা বর্ণিল আলোকছটা সন্ধ্যায় অপূর্ব শোভন রূপ আবহে মানুষকে বিমোহিত করে। চরখালী চৌরাস্তা মোহনার এ স্তম্ভটির পরিচিতি বিসমিল্লাহ চত্বর।
সুবহানাল্লাহ চত্বর: ভান্ডারিয়া পৌরশহর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ধাওয়া সড়কের ফুলতলা বাজারের ত্রিমোহনা সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে আরও একটি দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভ। ২০১৭ সালে পিরোজপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে গড়ে তোলা মিনার আকৃতির এ স্তম্ভটির নামকরণ করা হয়েছে সুবহান-আল্লাহ চত্বর। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার গোলাকৃতির এ স্তম্ভটি অনেকটাই মিনার গম্ভুজের আদলে গড়া। নানা বর্ণিল টাইলসে গড়ে তোলা গোলাকৃতির এ স্তম্ভটি নান্দনিক শোভা বর্ধন করেছে। তিনটি পিলারে গড়ে তোলা এ স্তম্ভটির নিচের মাঝখানে ছোট একটি স্তম্ভে স্টিলের হরফে লেখা রয়েছে আল্লাহু আকবর। আর তিনটি পিলারের নিচের অংশে লেখা রয়েছে আরবী ভাষায় আল্লাহর ৯৯ নাম। সুবাহান-আল্লাহ চত্বরটি ২০১৭ সালের ১০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়। মোহনার তিনটি সড়কের বহু দূর থেকে এটি দৃশ্যমান।
অল গাজ্জালী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইসলামী চিন্তাবীদ মাওলানা আব্দুল্লাহ মাহমুদ রূপালী র্বাতাকে বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থানে ত্রিমোহনা সড়কে ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ স্তম্ভ গড়ে তোলায় আমাদের ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। যখন দেশ-বিদেশের সড়ক ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের সামনে বিশ্ব নগ্ন ভাস্কর্য স্থাপন করছেন। সেই মুহূর্তে আমাদের সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভান্ডারিয়ায় পবিত্র তিনটি স্তম্ভ গড়ে তোলে ইসলামী চেতনা ও মহান আল্লাহ ও নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর ভালবাসার পরিচয় দিয়েছেন।
দৃষ্টিনন্দন এসব চত্বর প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু রূপালী বার্তাকে জানান, ‘করার সময় আমি খুব পরিকল্পনা করে করেছি তা নয়, তবে করার পর মানুষের মুগ্ধতা দেখে ভেবেছি, আমি কী করলাম! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। আমি দেখেছি, মানুষ যখন এই চত্বরের পাশ দিয়ে যান, তারা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মুগ্ধতার সঙ্গে তাকিয়ে থাকেন। মালিকের (আল্লাহর) ইচ্ছা হলে এমন চত্বর আরো হতে পারে। তাওফিক দিলে অন্যরাও এমন করতে পারে।